আজকাল বাইরে বের হলেই ঘাম, ধুলো–বালি, বৃষ্টি বা আর্দ্রতা—সব কিছুই মেকআপকে দ্রুত নষ্ট করে দেয়। বিশেষ করে গরমের দিনে বা আর্দ্র আবহাওয়ায় অনেকেরই সাজ দীর্ঘসময় টিকে না। এই কারণে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ এখন খুবই জনপ্রিয়। এটি শুধু ঘাম ও পানির বিরুদ্ধে টিকে থাকে না, বরং লুকটাকে আরও ফ্রেশ ও লং–লাস্টিং করে তোলে।
অনেকেই মনে করেন ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করা খুব কঠিন, কিন্তু সঠিক প্রোডাক্ট আর সঠিক টেকনিক জানলে ঘরে বসেই সহজে পুরো লুক তৈরি করা সম্ভব। এই পোস্টে ধাপে ধাপে দেখানো হলো কীভাবে ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক তৈরি করবেন এবং কোন টিপসগুলো ফলো করলে আপনার মেকআপ হবে নিখুঁত, স্মাজ–প্রুফ ও দীর্ঘস্থায়ী।
কেন ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক প্রয়োজন?
১. ঘাম ও আর্দ্রতা প্রতিরোধ — গরমকালে বা বাইরে বেশি সময় থাকতে হয় এমন দিনের জন্য ওয়াটারপ্রুফ বেস ও আইমেকআপ খুবই দরকারি।
২. বৃষ্টির দিনে সুরক্ষা — হঠাৎ বৃষ্টি হলেও মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।
৩. দীর্ঘসময় অক্ষত থাকে — অফিস, পার্টি বা ইভেন্টে পুরো দিন ধরে ফ্রেশ লুক বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. স্মাজ–প্রুফ ফিনিশ — আইলাইনার, কাজল বা মাসকারা ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।
৫. ফটো–রেডি লুক — বিশেষ অনুষ্ঠান বা ফটোগ্রাফির সময় ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ ক্যামেরায় আরও নিখুঁত দেখা যায়।
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক সহজ টিপস
নীচে একটি সম্পূর্ণ ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক রুটিন দেওয়া হলো — যা নতুনরা খুব সহজেই ফলো করতে পারবেন।
১: স্কিন প্রিপারেশন
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক দীর্ঘস্থায়ী করতে স্কিন প্রিপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১. ক্লিনজিং
ত্বকের অতিরিক্ত তেল, ধুলো–বালি ও ময়লা পরিষ্কার করতে হালকা ফোমিং বা জেল ক্লিনজার ব্যবহার করুন। পরিষ্কার ত্বকে মেকআপ বেশি সময় টিকে।
২. টোনিং
টোনার ত্বককে ব্যালান্স করে এবং মেকআপের জন্য ত্বককে প্রস্তুত করে। বিশেষ করে যারা অয়েলি স্কিন, তারা আলকোহল–ফ্রি টোনার ব্যবহার করতে পারেন যা তেল নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. ময়েশ্চারাইজার
ভারী ক্রিম নয়—হালকা, তেলহীন (oil-free) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে মেকআপ কেকি দেখাবে না।
৪. সানস্ক্রিন
ওয়াটারপ্রুফ বা জেল–বেজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানস্ক্রিনের উপর মেকআপ ভালোভাবে বসে এবং ঘামে নষ্ট হয় না।
২: প্রাইমার (Waterproof/Long-lasting Primer)
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের লুক মূল ভিত্তি হলো ভালো মানের প্রাইমার।
- অয়েল–কন্ট্রোল প্রাইমার নিলে ঘাম কম হবে।
- স্মুথিং প্রাইমার নিলে পোরস কম দেখা যায়।
- লং–লাস্টিং প্রাইমার বেসকে সারাদিন ঠিক রাখে।
নাক, কপাল ও চিবুক অংশে ভালোভাবে প্রাইমার ব্লেন্ড করুন। এগুলো দ্রুত ঘেমে যায়।
৩: ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশন টিপস
১. সঠিক ফাউন্ডেশন বাছাই
- ওয়াটারপ্রুফ
- লং–ওয়্যার
- ম্যাট ফিনিশ বা সেমি–ম্যাট
- সুইট–রেজিস্ট্যান্ট
২. কীভাবে লাগাবেন?
- বিউটি ব্লেন্ডার হালকা ভিজিয়ে ফাউন্ডেশন লাগালে ফিনিশ হবে ন্যাচারাল।
- হালকা লেয়ার করে লাগান; বেশি প্রোডাক্ট দিলে ঘামে গলে যেতে পারে।
- গলা ও কান পর্যন্ত সমানভাবে ব্লেন্ড করুন।
৪: কনসিলার
ডার্ক সার্কেল, দাগ বা স্পট ঢাকতে ওয়াটারপ্রুফ কনসিলার খুব ভালো কাজ করে।
- চোখের নিচে V-শেপে লাগান।
- দাগ বা ব্রণে হালকা প্যাট করে ব্লেন্ড করুন।
- ক্রিজিং এড়াতে পাউডার সেট করুন।
৫: সেটিং পাউডার
এই ধাপটি ছাড়া ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ সম্পূর্ণ হয় না।
- হালকা হ্যান্ডে চোখের নিচে, নাক ও টি–জোনে সেটিং পাউডার দিন।
- যারা অয়েলি স্কিন—তারা বেকিং টেকনিক হালকা করে করতে পারেন।
- পাউডার তেল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঘামেও বেস নষ্ট হতে দেয় না।
৬: ওয়াটারপ্রুফ লুক আইমেকআপ
১. ওয়াটারপ্রুফ আইলাইনার
- স্মাজ–প্রুফ লিকুইড বা জেল লাইনার বেছে নিন।
- বৃষ্টি বা ঘামে ছড়ায় না।
২. ওয়াটারপ্রুফ কাজল
- ওয়াটারপ্রুফ পেন্সিল কাজল চোখের নিচে ছড়িয়ে যায় না।
৩. আইশ্যাডো প্রাইমার
- আইশ্যাডো প্রাইমার দিলে চোখের শেড সারাদিন স্মাজ–ফ্রি থাকে।
৪. ওয়াটারপ্রুফ মাসকারা
- ভলিউমাইজিং বা লেনথেনিং যেকোনো একটি নিতে পারেন।
- ঘাম–পানি কোনো কিছুর কারণে ছড়ায় না।
TIP: মাসকারা দুই কোটের বেশি দেবেন না।
৭: ওয়াটারপ্রুফ ভ্রু
- ব্রাউ জেল বা ওয়াটারপ্রুফ আইব্রো পেন্সিল ব্যবহার করুন।
- ব্রাউ শেপ ঠিক রাখলে পুরো লুকটাই আরও পরিপাটি দেখায়।
৮: ব্লাশ, ব্রোঞ্জার ও হাইলাইটার
১. লিকুইড বা ক্রিম ব্লাশ
ক্রিম–বেজড ব্লাশ বেশি সময় টিকে, বিশেষ করে ওয়াটারপ্রুফ বেসে।
২. ব্রোঞ্জার ও হাইলাইটার
- পাউডার প্রোডাক্ট ভালো কাজ করে কারণ এগুলো ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে।
- হাইলাইটার খুব বেশি ভারী দেবেন না; ন্যাচারাল শিমারই সুন্দর।
৯: লিপ মেকআপ (Long-lasting Lipsticks)
ওয়াটারপ্রুফ বা ম্যাট লিপস্টিক কয়েক ঘণ্টা ধরে টিকে থাকে।
লিপ প্রস্তুতি:
- হালকা স্ক্রাব
- লিপ বাম
- পরে ওয়াটারপ্রুফ লিপ কালার
লিপ লাইনার দিয়ে লিপ শেপ ঠিক করলে লিপস্টিক ছড়িয়ে যাবে না।
১০: সেটিং স্প্রে (Makeup Setting Spray)
এটি ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
- লং–লাস্টিং বা ওয়াটারপ্রুফ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন।
- স্প্রে করার পর ১ মিনিট বাতাসে শুকাতে দিন।
- এটি পুরো মেকআপ লুক লক করে দেয় এবং দীর্ঘসময় ঠিক রাখে।
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপকে আরও দীর্ঘস্থায়ী রাখার টিপস
কম প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন – বেশি লেয়ার দিলে ঘামে দ্রুত নষ্ট হয়।
অয়েল–ফ্রি বেস প্রোডাক্ট নিন – ঘাম কম হবে।
টি–জোনে বেশি অয়েল–কন্ট্রোল পাউডার দিন।
মেঘলা বা আর্দ্র বাতাসে ভারী ময়েশ্চারাইজার নয়।
আইমেকআপে শুধু ওয়াটারপ্রুফ প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
মেকআপ লক করতে অবশ্যই সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন।
দিনে মেকআপ করলে ব্লটিং পেপার সঙ্গে রাখুন।
ফাউন্ডেশন, কনসিলার হালকা লেয়ারে ব্যবহার করুন।
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক রিমুভ করার উপায়
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ দীর্ঘস্থায়ী হলেও সঠিকভাবে রিমুভ না করলে ত্বকে জ্বালা, ব্রণ বা ব্লক পোরস হতে পারে।
১. অয়েল–বেজড মেকআপ রিমুভার
ওয়াটারপ্রুফ প্রোডাক্ট সহজে পরিষ্কার করে।
২. ডাবল ক্লিনজিং
- প্রথমে অয়েল ক্লিনজার
- তারপর জেল বা ফোম ক্লিনজার
৩. চোখের মেকআপ আলাদা করে পরিষ্কার করুন
কটন প্যাডে রিমুভার ভিজিয়ে চোখে ১০ সেকেন্ড চেপে ধরে পরিষ্কার করুন।
কাদের জন্য ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ বেশি উপকারী?
- যারা সারাদিন বাইরে থাকেন
- যারা দ্রুত ঘামেন
- গরমকালের ইভেন্ট বা পার্টির জন্য
- ব্রাইডাল বা ফটোশুটের জন্য
- বৃষ্টির মৌসুমে
- অয়েলি স্কিনের জন্য বিশেষভাবে উপকারী
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ লুক তৈরি করা মোটেও কঠিন নয়। সঠিক স্কিন প্রিপ, ওয়াটারপ্রুফ প্রোডাক্ট নির্বাচন এবং ধাপে ধাপে কাজ করলে যেকোনো আবহাওয়ায় আপনার মেকআপ থাকবে স্মাজ–ফ্রি, ফ্রেশ ও টিকাউ।
বৃষ্টি, ঘাম বা আর্দ্রতা—কিছুই আপনার লুক নষ্ট করতে পারবে না। আপনি চাইলে এই রুটিন অনুযায়ি অফিস, কলেজ, পার্টি কিংবা যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য লং–লাস্টিং ওয়াটারপ্রুফ লুক তৈরি করতে পারেন।










